ঠিক কবে নাগাদ আমরা নিজস্ব পেটেন্টেড ওষুধ পাবো?
বাংলাদেশের ওষুধের মোট বাৎসরিক বাজার প্রায় ৩০,০০০ কোটি টাকা যা প্রায় ১২ শতাংশ হারে বাড়ছে প্রতিবছর। আমাদের ওষুধের পুরো বাজারটাই হলো জেনেরিক বা কপি ভার্সন। আমরা এখন পর্যন্ত গবেষণা করে সম্পূর্ণ নতুন ওষুধ তৈরি করার সক্ষমতা অর্জন করিনি। করিনি বলে কোন দিনযে করবনা তাতো নয়! অনেক বড় বড় কোম্পানি আছে বাজারে যারা চাইলে শুরু করতে পারেন। কিন্তু আমাদের লোকবলের ঘাটতি রয়ে গেছে এখনো।
যতদিন সাতদেশের ফর্মূলা অনুযায়ী আমাদের ফার্মা ফর্মুলেশন চলবে ততদিন নতুন কিছু হবেনা। হয়তো অনেকে ধরতে পারছেন, না তাইতো? ভেঙ্গে বলি তাহলে।
আমাদের এক বড়ভাই Alzheimer disease এর একটি ফর্মূলা জাপানে পেটেন্ট পেয়েছেন। উনার খুব ইচ্ছা বাংলাদেশে কোন কোম্পানি জনস্বার্থে এটা তৈরি করুক। কিন্তু করতে পারছেন না!
আবার আরেক বড় ভাই ও আমার পুরাতন কলিগ, (নাম বললে অনেকে চিনবেন, তাই বললাম না) বর্তমানে প্রফেসার। উনি বেশকিছু ওষুধের আন্তর্জাতিক পেটেন্ট নিয়ে বসে আছেন কিন্তু আইনের বেড়াজালে লোকাল মার্কেটে দিতে পারছেন না। এরকম আরো অনেক উদাহরন আছে।
প্রচলিত আইনটা হলো যেসকল ওষুধ কেবল যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানী, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন কর্তৃক অনুমোদিত কেবলমাত্র সেসব ওষুধই বাংলাদেশে ওষুধ হিসেবে বাজারজাত করতে পারবেন। এই আইনের ভালোমন্দ দুটোই আছে। ভালোদিক হলো, কেবলমাত্র রেগুলেটেড কান্ট্রি গুলোর অনুমোদিত ওষুধ হওয়ায় দেশীয় ওষুধ প্রশাসনকে ততটা ভাবনাচিন্তা করতে হয়না। নতুন ওষুধের কার্যকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে চ্যালেন্জের মুখে পড়তে হয়না। আগেই বলেছি, চাইলেও কেউ নতুন ধরনের ওষুধ আনতে পারেনা। আবার লোক বলের অভাব, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব এগুলোতো ছিলই।
এই আইনের অসুবিধার কথা যদি বলি তাহলে, আমরা অতিমাত্রায় পরনির্ভরশীল হয়ে পড়েছি। আজ আমাদের নিজস্বতা বলতে কিছু নেই। নতুন মলিকিউল নিয়ে কোন গবেষনা নেই। ফ্যাকাল্টি ও ইন্ডাস্ট্রির পথ যেন আলাদা। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শুধু কোয়ালিটি কন্ট্রোল করছে, প্রকৃত সাইনটিস্ট হতে পারছে না। তাই ছোটখাটো ফরমুলেশন জনিত যেকোন কারনে ডাকতে হচ্ছে বিদেশিদের। দেশের টাকা অযথাই চলে যাচ্ছে বিদেশে। এমন শতশত কনসালটেন্ট এখন দেশের ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছে। আর বিদেশী কনসালটেন্ট নিয়ে আপনাদের অনেকের অভিজ্ঞতা যেন দিল্লীকা লাড্ডুর মতো।
তাহলে কি করনীয়। ভালো কাজ, ভালো নিয়ম কপি করতে দোষ নেই। যে কাজটি আমাদের পাশের দেশ করেছে এবং ব্যপক সফলতা পেয়েছে সেটাও করতে পারি আমরা। ইন্ডিয়া মাত্র কয়েক দশক আগেও আমারা যা করছি তারাও তাই করতো। তারপর রিভার্স ইন্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে প্রথম পেটেন্ট মেডিসিন প্রোপ্রানোলল তৈরি করে আলোচনায় আসে। সে সময়কার সিপলার আরএন্ডডি হেড এর উদ্যেগে পেটেন্ট নিয়মে পরিবর্তন আনা হয়েছিল। এরপর যা হয়েছিল- পেটেন্ট ওষুধের সামান্য পরিবর্তন ঘটিয়ে বা দুটো পেটেন্ট ওষুধকে একসাথে দিয়ে (কম্বিনেশন ডোজ/ড্রাগ) নতুন একটা পেটেন্ট নিতো। এমনকি করে তারা নিজেদের ফর্মূলা নিজেরা তৈরী করা শিখল পাশাপাশি তাদের ফর্মুলা যখন অন্যরা ব্যবহার করা শুরু করলো তখন কলাম, রিয়েজেন্ট, টেস্ট এপারেটাস ইত্যাদি ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ বিজনেসগুলো পাওয়া শুরু করলো।
(চলবে)
মোঃ রেজাউল করিম
এম. ফার্ম, এমবিএ
মার্কেটিং ম্যানেজার
ডিবিএল ফার্মাসিউটিক্যালস্ লিমিটেড।